বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:২৩ পূর্বাহ্ন

নিষিদ্ধ চায়না জালে সয়লাব দোহার, নির্বিকার প্রশাসন

নিষিদ্ধ চায়না জালে সয়লাব দোহার, নির্বিকার প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিনিধি:: নিষিদ্ধ চায়না জাল তৈরীর কারখানা দোহারের বিলাশপুরে যেন শিল্প পল্লীতে পরিণত হয়েছে। পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে দোহার উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়ন। প্রায় প্রতিটি পাড়া মহল্লাতেই তৈরী হচ্ছে সরকার নিষিদ্ধ চায়না জাল। প্রায় অর্ধশত বাড়িতে প্রকাশ্য ও গোপনে এ জাল তৈরী করা হয়। নির্বিকার স্থানীয় প্রশাসনের তদারকি নেই। এ বিষয়ে ভাবছে না খোদ মৎস্য অধিদপ্তর। এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিলাশপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে রাস্তার পাশে ‘ইসমাইল এগ্রো এন্ড ফিশিং নেট ইন্ডাষ্ট্রিজ’ নামে একটি সাইনবোর্ড টাঙ্গাানো। পিছনেই নীল রংয়ের বিশাল আকৃতির টিনের ঘর। ভেতরে প্রবেশ করতেই বাধা দেন সাদ্দাম হোসেন নামে এক যুবক। সে ওই প্রতিষ্ঠানের স্টোর কিপার। তবে এ প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে পেরে আরো থমকে যান। তিনি বলেন, এখানেই বসুন। ভাইয়ের অনুমতি লাগবে। ভাই হলেন এ প্রতিষ্ঠানের মালিক দাবিদার নিলুয়ার হোসেন নিলু। তিনি আসলেন। তবে কথা বলতে রাজি হতে চাইলেন না। পরবর্তীতে তিনি ফোন করেন হুমায়ন রশিদ বাবু নামে একজনকে। তিনি হলেন এ প্রতিষ্ঠানের এমডি। তাঁর সাথে কথা বলে এ প্রতিবেদক কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে।

এগ্রো বলতে কিছু নেই: কারখানার ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। নেই পশুপালনের কোনো চিহ্ন। প্রায় তিন বিঘা জায়গা জুড়ে শুধু জালের স্তুপ। মেশিন দিয়ে তৈরী হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত চায়না জাল। এক ধরনের সরু প্লাষ্টিক পাইপ থেকে মেশিন দিয়ে সুতো তৈরী করছে। এর সাথে লোহার চাক দিয়ে বানাচ্ছে চায়না দোয়ারী। কারখানাটিতে দুই শতাধিক নারী পুরুষ কাজ করছেন। এ জাল শুধু দোহারেই নয়। রপ্তানি করা হয় পাশ^বর্তী ভারতেও।

কারখানার মালিক নিলুয়ার বলেন, এ জাল দিয়ে নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। তাই এক্সপোর্ট করি। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে যায়। প্রশাসন তাঁকে কোনো নিষেধ করছে না। মাসে প্রায় ১০ হাজার টন জাল ভারতে যায় বলে জানান ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মিজানুর রহমান। তিনি চাকুরী করেন। বাড়ি শরীয়তপুর। প্রতি কেজি জাল ২০০-২৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

নিষিদ্ধ চায়না জালে সয়লাব দোহার, নির্বিকার প্রশাসন

শুধু নিলুয়ার নয় পাশের দেবীনগর গ্রামের মো. নোমান ও ইব্রাহীম শেখের বাড়িতেও কারখানায় তৈরী হচ্ছে চায়না জাল। তবে অপরিচিত লোক দেখলেই এরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকে। নোমান ও ইব্রাহীমকে কারখানায় ডেকেও পাওয়া যায়নি।

এলাকাবাসীর ভাষ্য. নিষিদ্ধ এ চায়না জালের কারণে নদীতে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। খুব সরু ছিদ্র থাকায় ছোট্র মাছও এ জালে আটকে যায়। স্থানীয় মো. হাশেম বেপারী বলেন, এ জাল ক্ষতি করে। আবার কিছু ভালো কাজও হয়। এলাকার প্রায় কয়েকশত মহিলা পুরুষ এখানে কাজ করে জীবন চালায়।

কারখানায় কাজের শ্রমিক মোকসেদ বলেন, প্রায় চার বছর ধরে তিনি এখানে কাজ করেন। তবে কথা বলতে ভয় কেন এমন প্রশ্নে বলেন, স্যার এটা করা তো নিষেধ তাই। ফিরোজা বেগম (৬৫) বলেন, সারা দিন কাম(কাজ) করলে ৩/৪শ টাকা পাই। সকালে রান্না করেই কামে আসি। অনেকে বাড়িতে বইসাও করে। শিশু বাচ্চা নিয়ে কাজে এসেছেন কুতুবপুর গ্রামের আরেক গৃহবধু সাজেদা আক্তার। তিনি বলেন, সংসারের কাম কাজ শেষে এখানে কাজ করি। কখনো বাড়িতে নিয়েও কাজ করে দেই।

দোহার উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, চায়না জাল বা চায়না দোয়ারী নিষিদ্ধ নয়। তবে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। একাধিকবার অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান জাল পোড়ানো হয়। অনেকেই গোপনে করে থাকতে পারে। জয়পাড়া বাজার জুড়েই গুদাম ভর্তি নিষিদ্ধ এ চায়না জাল।

এ বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলোরা ইয়াসমিন বলেন, মৎস্য বিভাগকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পেলে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com